মৈত্রেয়ী-বাংলার রাত ও ‘ন হন্যতে’: সাহিত্যের সীমানা
১৯৩০ এর দশক। এক রোমানীয় যুবক বিদ্যা অর্জন ও ভাগ্যের চড়কায় গতি আনতে ভারতে আসেন। কলকাতায় ঠাঁই নিলেন মির্চা এলিয়াদ (Mircea Eliade) । মির্চা এলিয়াদের বয়স তখন মাত্র ২০ এর কোঠায়। ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল মির্চার। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ভাষার অধ্যাপক পণ্ডিত সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত পরিবারে থাকার ব্যবস্থা হয় মির্চা এলিয়াদের।

১৯৩০ এর দশক। এক রোমানীয় যুবক বিদ্যা অর্জন ও ভাগ্যের চড়কায় গতি আনতে ভারতে আসেন। কলকাতায় ঠাঁই নিলেন মির্চা এলিয়াদ (Mircea Eliade) । মির্চা এলিয়াদের বয়স তখন মাত্র ২০ এর কোঠায়। ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল মির্চার। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ভাষার অধ্যাপক পণ্ডিত সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত পরিবারে থাকার ব্যবস্থা হয় মির্চা এলিয়াদের।
হিন্দু পরিবারে একজন খ্রিস্টানের থাকার আয়োজন ছিল তৎকালীন সময়ে ব্যতিক্রম। সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত পরিবারের থাকার সুবাদে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে মির্চার সম্পর্ক গড়ে উঠে। সময়ের আবর্তে সুরেন্দ্রনাথ কন্যার সঙ্গে অমৃতা-মৈত্রেয়ী দেবীর পরিচয় ঘটে।
অমৃতা-মৈত্রেয়ী দেবীর বয়স ছিল ১৬ বছর। তৎকালীন বাঙালি সমাজে এই বয়সে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া মেয়েদের সংখ্যা ছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। শুধু মাত্র পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া ছিল কষ্টকর সমাজ প্রগতির লড়াই। মির্চা ও মৈত্রেয়ী দেবী একে অপরকে ভাষা শিখাতেন। মির্চা বাংলা আর মৈত্রেয়ী দেবী ফরাসি ভাষার তামিল নিতেন। স্বাভাবিক নিয়মে দুই বুদ্ধিদীপ্ত যুবক-যুবতী একে অন্যের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন। ভালো লাগা ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়। দুইজনের প্রেমের কথা সুরেন্দ্রনাথ পরিবারের কাছে জানাজানি হলে মির্চার সঙ্গে পরিবার ও মৈত্রেয়ী দেবীর সম্পর্ক ছেদ ঘটে। মির্চাকে সুরেন্দ্রনাথের বাড়ি ছাড়তে হয়। এরপর আরও কিছুদিন ভারতে ছন্নছাড়া জীবনযাপন করে মির্চা ইউরোপে ফিরে যান।
মির্চা ১৯৩৩ সালে তাঁদের প্রণয় কাহিনী নিয়ে রোমানিয়ান ভাষায় Maitreyi- “মৈত্রেয়ী” লিখেন। এই বই ১৯৪৫ সালে ইতালি, ১৯৪৮ সালে জার্মান, ১৯৫০ সালে ফরাসি ভাষায় অনূদিত হয়। ফরাসি ভাষায় অনুবাদের সময় Maitreyi- “মৈত্রেয়ী এর নাম পরিবর্তন করে ‘লা নুই বেঙ্গলী’- বাংলার রাত রাখা হয়। সেই থেকে বইটি এই নামেই পরিচিতি লাভ করে।
মির্চা ১৯৩৩ সালে তাঁদের প্রণয় কাহিনী নিয়ে রোমানিয়ান ভাষায় Maitreyi- “মৈত্রেয়ী” লিখেন। এই বই ১৯৪৫ সালে ইতালি, ১৯৪৮ সালে জার্মান, ১৯৫০ সালে ফরাসি ভাষায় অনূদিত হয়। ফরাসি ভাষায় অনুবাদের সময় Maitreyi- “মৈত্রেয়ী এর নাম পরিবর্তন করে ‘লা নুই বেঙ্গলী’- বাংলার রাত রাখা হয়। সেই থেকে বইটি এই নামেই পরিচিতি লাভ করে।
মৈত্রেয়ী দেবী ও তাঁর পরিবারের কাছে মির্চার বইয়ের খবর জানা ছিল বইটি প্রকাশের কয়েক বছরের মধ্যেই ১৯৩৭ সালে। মৈত্রেয়ী রোমানিয়া ভাষায় লিখিত , ইতালি , স্প্যানিশ ভাষা অনুদিত হয়েছিল বইটি। এই ভাষাগুলের অনুবাদ সাহিত্য এই অঞ্চলে তেমন কোনো প্রচলন না থাকায় বইয়ের বিষয় বস্তু মৈত্রেয়ী দেবীদের কাছে অজানা থাকার সম্ভবনা প্রবল।
মৈত্রেয়ী দেবী ও তাঁর পরিবারের কাছে মির্চার বইয়ের খবর জানা ছিল বইটি প্রকাশের কয়েক বছরের মধ্যেই ১৯৩৭ সালে। মৈত্রেয়ী রোমানিয়া ভাষায় লিখিত , ইতালি , স্প্যানিশ ভাষা অনুদিত হয়েছিল বইটি। এই ভাষাগুলের অনুবাদ সাহিত্য এই অঞ্চলে তেমন কোনো প্রচলন না থাকায় বইয়ের বিষয় বস্তু মৈত্রেয়ী দেবীদের কাছে অজানা থাকার সম্ভবনা প্রবল।
বইটির ফরাসি অনুবাদ হয় ১৯৫০ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধত্তোর কালে। ফরাসি অনুবাদ মির্চার সাহিত্যিক পরিচয়কে সামনের দিকে নিয়ে যেতে যথেষ্ট সহায়তা করেছে। তবে ফরাসি অনুবাদে মূল বইয়ের নাম মৈত্রেয়ী পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলার রাত। প্রথম প্রকাশের ১৭ বছর পর, বেশ কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হওয়ার পর বইয়ের নাম পরিবর্তন কোনো লেখকের জন্য সুখকর হওয়ার কথা নয়। মির্চা হয়তো অনেক আগেই শিখে ছিলেন প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ফারাক অনেক .. ..। ফরাসি প্রকাশনা শিল্প পুঁজির ইচ্ছেয় মৈত্রেয়ী হয়ে যায় বাংলার রাত।
বাংলার রাত -কেমন বই ? এই বইয়ের বাংলা অনুবাদকে কোথায়-কোথায় কড়ি কাঠে পেরেক ঠোকার মত মনে হবে। ভাষান্তরে লেখকের বক্তব্য উঠে এসেছে, অনেক ক্ষেত্রে ভাব উঠে গেছে। ইংরেজি অনুবাদ প্রাণবন্ত। মৈত্রেয়ী বা বাংলার রাত যে নামেই ডাকা হোক না কেন এই বইকে সাহিত্য মূল্যে শরৎচন্দ্রের দেবদাসের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। বহুল পঠিত কিন্তু শরৎচন্দ্রের সাহিত্য মূল্যায়নে দেবদাসের কোনো স্থান নেই। তেমনি এই বই মির্চা এলিয়াদের বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় এই এই বইয়ের কোনো জায়গা নেই।
বাংলার রাত -কেমন বই ? এই বইয়ের বাংলা অনুবাদকে কোথায়-কোথায় কড়ি কাঠে পেরেক ঠোকার মত মনে হবে। ভাষান্তরে লেখকের বক্তব্য উঠে এসেছে, অনেক ক্ষেত্রে ভাব উঠে গেছে। ইংরেজি অনুবাদ প্রাণবন্ত। মৈত্রেয়ী বা বাংলার রাত যে নামেই ডাকা হোক না কেন এই বইকে সাহিত্য মূল্যে শরৎচন্দ্রের দেবদাসের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। বহুল পঠিত কিন্তু শরৎচন্দ্রের সাহিত্য মূল্যায়নে দেবদাসের কোনো স্থান নেই। তেমনি এই বই মির্চা এলিয়াদের বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় এই এই বইয়ের কোনো জায়গা নেই।
মৈত্রেয়ী বা বাংলার রাত এর বিপরীতে মৈত্রেয়ী দেবীর ‘ন হন্যতে’ অনেকটা মশা মারতে কামান দাগানের মত। তবে মৈত্রেয়ী দেবী মশা মারতে কামান না দাগালে বাংলা সাহিত্য একটি ভালো বই থেকে বঞ্চিত হত। মির্চার উপন্যাসটি আত্মজীবনীমূলক। কোনো সাহিত্য কর্ম নিরেট সত্যের উপর দাঁড়িয়ে থাকলে, সেটা আর যাই হোক তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম হিসেবে দাঁড়াবে না। মির্চা এই লেখায় মৈত্রেয়ী দেবীর এর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের ইঙ্গিত করেছেন। মির্চার বর্ণনাকে নাকচ করে দিয়ে মৈত্রেয়ী দেবী সরাসরি উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থেকে প্রচুর পরিমানে নীতি বাক্য লিখেছেন অতি প্রাণবন্ত ভাষায়। রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতি ছড়াছড়ি ও রবীন্দ্র পরিচয়কে ব্যবহার করে শব্দের কুহেলিকা তৈরিতে সফল হয়েছেন মৈত্রেয়ী দেবী। মৈত্রেয়ী দেবী ১৯৭২ সালে যখন ‘ন হন্যতে’ লিখছিলেন ততদিনে অন্তত ভারতীয় শহুরে মেয়েরা অনেক দূরে এগিয়ে এসেছে। তাদের কাছে অভিসারের গালগল্প পানসে হয়ে উঠেছিল। ন হন্যতে-তে ইঙ্গিতটা ভালোবাসার অমরত্বের দিকে নয়, বরং দুটি বিপরীত মুখী ধারাবিবরণীর মৈত্রেয়ী কথ্যকে অমরত্বের দিকে ।
Category: Book
Tags:
Share with others
Recent Posts
Recently published articles!
-
Mukto Library Desk
-
Super Admin
-
Nasir Khan
-
Super Admin