নিজের স্বপ্নকে জাগিয়ে তুলে রিজিয়া রহমানের `নদী নিরবধি’
‘মানুষ তো চিরকাল পৃথিবীর প্রান্ত থেকে প্রান্তে অভিবাসন তৈরি করে চলেছে, মানুষ আসলে অনন্তকালের অভিযাত্রী।’ এই লাইন দিয়ে শুরু করেছেন লেখক রিজিয়া রহমানের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ নদী নিরবধি । পারিবারিক একটি সংলাপের মাধ্যমে শুরু হয় তাঁর জীবনসংগ্রামের আত্মকথন। বইটি প্রকাশিত হয় ২০১১ সালের অমর একুশে গ্রন্থ মেলা। প্রকাশ করেন ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ। প্রচ্ছদ করেন নিয়াজ চৌধুরী তুলি।

‘মানুষ তো চিরকাল পৃথিবীর প্রান্ত থেকে প্রান্তে অভিবাসন তৈরি করে চলেছে, মানুষ আসলে অনন্তকালের অভিযাত্রী।’ এই লাইন দিয়ে শুরু করেছেন লেখক রিজিয়া রহমানের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ নদী নিরবধি । পারিবারিক একটি সংলাপের মাধ্যমে শুরু হয় তাঁর জীবনসংগ্রামের আত্মকথন। বইটি প্রকাশিত হয় ২০১১ সালের অমর একুশে গ্রন্থ মেলা। প্রকাশ করেন ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ। প্রচ্ছদ করেন নিয়াজ চৌধুরী তুলি।
বইটি কয়েকটি অধ্যায় ভাগ করেছেন লেখক। অভিবাসী আমি, কেয়াপাতায় নৌকা গড়ার দিন, সেথা সব পড়শি বসত করে ও নদী নিরবধি। লেখক প্রতিটি অধ্যায় এত চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছন তা যেকোনো পাঠকের ভালো লাগবে। জানতে পারতে একজন লেখকের শৈশবে বেড়ে ওঠা, লেখক হয়ে ওঠার গল্প, সেই সময়ের ঘটে যাওয়া ঘটনাসহ নানা বিষয়।
‘অভিবাসী আমি’ অধ্যায়ে শুরু লেখকের বড় ভাইয়ের ছেলে অপু ও তার স্ত্রী আমেরিকা থেকে দেশে আসার পর ইমিগ্রেশন নিয়ে কথা বলেছেন। লেখক লিখেছেন—‘আমার বড়ো ভাইয়ের ছেলে অপু আর ওর বউ বারবার, এক মাসের ছুটি কাটাতে আমেরিকা থেকে এসেছে ঢাকায়। কথা হচ্ছিল আমার আমেরিকায় ইমিগ্রেশনের ব্যাপারে। ইমিগ্রেশন ভিসার ইন্টারভিউর জন্য আমাকে চিঠি পাঠানো হয়েছে অনেক আগেই। ভিসা নিতে আমি যাইনি। অপুর মতে—‘কাজটা ঠিক হয়নি, গ্রিন কার্ডটা নিয়ে রাখলে তো কোনো ক্ষতি নেই, বরং লাভই।’ লেখকের যে দেশান্তরী হতে প্রচণ্ড অনীহা ছিল এই অংশটুকু পড়লে বুঝা যায়। কিন্তু ভাইয়ের ছেলে অপু বুঝাতে লাগলেন, সারাটা পৃথিবীই মানুষের দেশ। মনে কর তো বড় ফুফু, আমাদের পূর্বপুরুষ, কোথায় সেই মধ্য এশিয়ার উজবেকিস্তান থেকে এসেছিল দিল্লিতে। তারপর পশ্চিমবঙ্গে। তোমার বাবা অর্থ্যৎ আমার দাদা পশ্চিমবঙ্গে ছেড়ে এলেন এই বাংলাদেশে, আর তার নাতি আমি, এখন আমেরিকায় ঘর বাঁধছি। মানুষ তো এমনি চিরকাল দেশান্তরী।’
স্মৃতির কথা লিখে গিয়ে লেখক বলেন, ‘স্মৃতির পরতগুলোতেই লেখা থাকে সেই অভিবাসনের কাহিনী। যে কাহিনী কেবলই স্মৃতিকথা, আর কিছু নয় অথবা সে যেন শুধু ভোঁ–কাট্টা ঘুড়ির মতো হারিয়ে যাওয়া কিছু।’..
এ পৃথিবীতে স্মৃতির অভাব মানুষের জীবনে কখনো হয়েছে বলে মনে হয় না। মানুষ মাত্রই যেন একেকটি স্মৃতির জাহাজ।ধাবমান সময় অবধারিত নিয়মে মানুষের জীবনকে পরিণতির দিকে ছুটিয়ে নিয়ে যায়। শৈশব, কৈশোর থেকে যৌবন, তারপর মধ্য বয়স, বার্ধক্য অতিক্রম করে ক্রমেই শেষ পরিণতির দিকে যাত্রা। এই ছুটিয়ে নেয়ার বড় অবদান হচ্ছে প্রতিদিন গুচ্ছ গুচ্ছ স্মৃতি তৈরি করে যাওয়া। আজ যা বর্তমানের ঘটনা, কালই তা পড়ে থাকছে বিগতের ঘরে। এক সময় সেসব হয়ে উঠছে স্মৃতি, জীবনের স্মৃতি। দুঃখের কিংবা সুখের, মূল্যবান অথবা মূল্যহীন। জীবন বোধহয় একটা স্মৃতি গ্রন্থ।
লেখক বিনয় সঙ্গে বলেছেন, ‘আমার নিজের জীবনের স্মৃতি–গ্রন্থটি কিন্তু কখনোই খুব একটা মূল্যবান মনে হয়নি। অবশ্য অনেকে আমাকে আত্মজীবনী লেখার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।’
কলকাতা মহানগরী ছিল লেখক রিজিয়া রহমানের জন্ম। সেই জন্মের শহরের স্মৃতিগুলো লেখকে বারবার মনের গভীরে নাড়া দেয়। সেখানকার হাসপাতাল, বাজার, মিষ্টির দোকান, চিড়িয়াখানা, মাঠ–ঘাট ঘুরে বেড়ানো সেই স্মৃতি চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। ছোটবেলায় লেখকের বাবা জোনাকি নামে ডাকত। মনের মাঝে লেখকের সেই বাবার ডাকটা মনে পড়ে। বাবা বলতেন—‘তুমিও তো জোনাকি। এই আলোর ভুবন তোমারই।’
বারো মাসে অসুখ–বিসুখে কেটেছে শৈশব। নিঃসঙ্গ এক শিশু মতো ঘরে বারান্দায় একা একা মনের খেলা খেলতেন। কথা বলতেন কাক আর চড়ুইদের সঙ্গে। এই ভাবনা থেকে লেখকের কল্পনাপ্রিয় করে তুলে।
লেখক শৈশবে দেখেছেন যুদ্ধ, মহাযুদ্ধ। তিনি বলেছেন—‘যুদ্ধ। যুদ্ধ। যুদ্ধ। যুদ্ধ হয় সারা পৃথিবীজুড়ে, আমার ছোট্ট চেনা ভূবনটিকে ঘিরে।…ভুলে যাই একটু আগেই আকাশ কাঁপিয়েছে জাপানি বোমা, যুদ্ধ হয়েছে, যুদ্ধ হচ্ছে। যুদ্ধ চারদিকে। মাঠের মাঝে জিগজাগ করে কাটা ট্রেঞ্জে নেমে সবাই দুষ্টুমি করে, ফড়িং ধরে, ছুটোছুটি খেলে।
আমার জন্ম বিশ্বযুদ্ধের মাঝে। জ্ঞানের আলো ফুটতে শুরু করার পর থেকে হিংস্র পৃথিবীর যুদ্ধের উন্মত্ততা অনুভব করতে করতেই আমার বেড়ে ওঠা। এ বয়সে এসে স্বীকার করতেই হয়, যুদ্ধ বসবাস করে মানুষের রক্তে। দুচোখ বন্ধ করলেই যেন দেখতে পাই এক যুদ্ধকে।
লেখক রিজিয়া রহমানের মা ছিলেন একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ মানুষ। পছন্দ করতে থিয়েটার। মায়ের সঙ্গে একবার থিয়েটার দেখে যান তিনি।সেই সময় লেখকের থিয়েটার উপভোগ করা বয়স হয়ে ওঠেনি। তারপর মায়ের আগ্রহে তিনি দেখেন। বেড়ে ওঠেন একটি শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিমণ্ডলে। লেখক কলকাতায় বেড়ে ওঠার নানা স্মৃতি এই গ্রন্থে তিনি লিখেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দেশভাগে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখেন। সেই সময়ে নানান স্মৃতি উল্লেখ করেন। লিখেন—‘আমার জন্ম বিশ্বযুদ্ধের মাঝে। জ্ঞানের আলো ফুটতে শুরু করার পর থেকে হিংস্র পৃথিবীর যুদ্ধের উন্মত্ততা অনুভব করতে করতেই আমার বেড়ে ওঠা। এ বয়সে এসে স্বীকার করতেই হয়, যুদ্ধ বসবাস করে মানুষের রক্তে। দুচোখ বন্ধ করলেই যেন দেখতে পাই এক যুদ্ধকে। সারা জীবন এই যুদ্ধেই আমাকে তাড়িয়ে ফিরেছে। যুদ্ধ যেমন আমার ভেতরের জগতের তেমন দৃশ্যমান জগতেরও। যুদ্ধই আমাকে একেকটি, বয়স ও ভূমি থেকে উন্মুখ করে ছুঁড়ে দিয়েছে নতুন ভিন্ন এক বয়সে, ভিন্ন ভূমিতে। গড়ে নিতে হয়েছে নতুন অভিবাসন। আসলে যুদ্ধ তো মানুষের আজন্মেরই সঙ্গী। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য মানুষ যুদ্ধ করে।’
জন্মের শহর কলকাতার শেয়ালদা স্টেশন ছেড়ে লেখকে চলে আসতে হলো গোয়ালন্দ মেল রাজবাড়ী জংশন স্টেশনে।
২.
‘কেয়াপাতায় নৌকা গড়ার দিন’ —এই অধ্যায় লেখক বাংলাদেশ আসার ঘটনা তুলে ধরেছেন। কলকাতার জীবন থেকে পূর্ববাংলা শুরু হলো আরেক জীবন।ছেড়ে আসা আজন্মের চেনা শহর কলকাতার জন্য লেখকের মন প্রায় কেঁদে ওঠে। লেখক লিখেছেন—‘ ফরিদপুরের সেই ছোট রেলস্টেশনটি এখনো মনের মাঝে যেন স্মৃতির রেলস্টেশন হয়ে ঘুমিয়ে আছে, যেন স্বপ্নেই সেখানে এসে থেমে যায় কোনো স্মৃতির রেলগাড়ি। স্বপ্নেই যেন বেজে ওঠে রেলের বাঁশি, ঝিকঝিক করে ঝমঝম শব্দে পেরিয়ে আসে সরু নদীর ছোট ব্রিজ।… রাতের সেই শব্দগুলো এখনো মধ্যরাতে কোনো এক স্মৃতিময় রেলস্টেশনে পৌঁছে দেয় আমাকে।’ ফরিদপুরে লেখক আসেন তখনও ভারতবর্ষের মানচিত্রের অঙ্গহানি ঘটেনি। শুরু হয়েছে হিন্দু–মুসলামনের কাটাকাটি। এই কারণে পড়াশোনাও বন্ধ ছিল লেখকের। ফরিদপুরে আসার পর লেখক আবার পড়াশোনা শুরু করেন। লেখক বলেছেন—ফরিদপুরে আসার কত মাস পর স্কুলে প্রথম গেলাম, সেই হিসাবটি সঠিক মনে নেই। তবে সেটা ছিল শীতের এক সকাল। ফরিদপুর সদর হাসপাতালের লাগালাগি হয়ে দাঁড়িয়েছিল একটি লাল একতলা দালান। সবাই ওটাকে বলত শিশুমঙ্গল। এরকমই লেখা সাইনবোর্ড টাঙানো ছিল সেই দালানে। ঠিক তার উল্টোদিকেই বড় রাস্তার ওপারে দেয়ালে ঘেরা ‘ফরিদপুর গভর্নমেন্ট গালর্স স্কুল। আমাদের বাড়ি থেকে একেবারেই কাছে।’
প্রতিটি লেখকের লেখক হওয়ার পিছনের একটি গল্প থাকে। ঠিক রিজিয়া রহমানেরও একটি গল্প ছিল। লেখক লিখেছেন—পেন্সিল স্কেচ করায় ছিল দারুণ নেশা আমার। ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগে রবিঠাকুরেরর স্কেচ করে পড়ার টেবিলে বাঁধিয়ে রেখেছিলাম। এখন কখনো কখনো ভাবি, চিত্রকর বা ভাস্কর হলেই নিজের সঠিক প্রতিভাটি প্রকাশ করতে পারতাম। কারণ এখানে আমার ইচ্ছে হয় পেন্সিল স্কেচ করতে, মাটি দিয়ে মূর্তি গড়তে। জীবনের সঠিক পথটি বেছে নিতে হয়তো বারবারই ভুল করেছি। ডিগ্রি পরীক্ষায় বাংলায় রেকর্ড মার্ক পাওয়ার পরও জেদ ধরে পড়লাম অর্থনীতি। দারুণ ইচ্ছে ছিল ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকসে থিসিস করব; অথচ যখন কলেজে ছাত্রীদের পড়াই অর্থনীতির নিরস সূত্র, ভালো লাগে না আমার। অফ পিরিয়ডে টিচার্সরুমে বসে লিখি পরিশ্রম সাপেক্ষ উপন্যাস ‘বাং থেকে বাংলা’। এ উপন্যাসই আমাকে কলেজের চাকরি ছাড়িয়ে নিয়ে এলো সাহিত্যের অঙ্গনে। এটি কি ছিল ভুল সিদ্ধান্ত, নাকি জ্যোতিদির প্রভাবে গল্প বলার ভূমিকায় আত্মপ্রকাশ? সমাধানটি আজো খুঁজে পাই না।’…
ডিগ্রি পরীক্ষায় বাংলায় রেকর্ড মার্ক পাওয়ার পরও জেদ ধরে পড়লাম অর্থনীতি। দারুণ ইচ্ছে ছিল ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকসে থিসিস করব; অথচ যখন কলেজে ছাত্রীদের পড়াই অর্থনীতির নিরস সূত্র, ভালো লাগে না আমার। অফ পিরিয়ডে টিচার্সরুমে বসে লিখি পরিশ্রম সাপেক্ষ উপন্যাস ‘বাং থেকে বাংলা’। এ উপন্যাসই আমাকে কলেজের চাকরি ছাড়িয়ে নিয়ে এলো সাহিত্যের অঙ্গনে। এটি কি ছিল ভুল সিদ্ধান্ত, নাকি জ্যোতিদির প্রভাবে গল্প বলার ভূমিকায় আত্মপ্রকাশ? সমাধানটি আজো খুঁজে পাই না।’…
‘‘আমার গল্প লেখার প্রতিভা আবিস্কার ও প্রচারের কাজটি করে আরেকবার আমার বিরাগভাজন হয়েছিল আমার বন্ধু ছন্দা চক্রবর্তী। পাঠ্যবইয়ের বাইরের অপাঠ্য যত গল্পকাহিনী রূপকথা পড়তে পড়তে বোধহয় লেখার ইচ্ছাটা জন্ম নিয়েছিল ভেতরে। ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময়েই লিখেছিলাম জীবনের প্রথম কবিতাটি। হাওয়ায় ওড়া, রোগা, প্রায় চোখে না পড়ার মতো মিনমিনে স্বরের মেয়েটি যে দশ লাইনের একটা কবিতা লিখে বসতে পারে, বিশ্বাসই হয়নি প্রথমে বাড়ির কারো।’
৩.
‘ফরিদপুর। চল্লিশের দশকের প্রায় শেষের ঘরে এসে, এক উঠতি বেলায়, দিনটা সেখানে শুরু হয়েছিল অন্য দিনগুলোর মতোই..’ নদী নিরবধি—এই অধ্যায় লেখক বড় হয়ে ওঠার গল্প লিখেছন। সেই সময়ের নেতাদের কথা উল্লেখ করেন। রাজবাড়ীতে গান্ধীজি আসার কথা। সেখানে চাক্ষুষ দেখতে না পাওয়ার দুঃখের কথা উল্লেখ করেন।
‘‘ বাবার সঙ্গে রাজবাড়ীতে গিয়ে গান্ধীজিকে চাক্ষুষ দেখতে না পাওয়ার দুঃখ মন থেকে মুছে যায় মুহুর্তে। দুপুরে হাসপাতাল থেকে ফিরে বাবা জিজ্ঞেস করলেন, আজকের খবরের কাগজে গান্ধীজির ছবি ছাপা হয়েছে, দেখেছ?
আশাহত আমি মাথা কাত করে জানাই দেখেছি, খুব রোগা আর বুড়ো মানুষ, লাঠি ভর দিয়ে হেঁটে। হেসে ফেললেন বাবা—পছন্দ হয়নি বুঝি! শোন, ওই লাঠি ভর দিয়ে হাঁটা বুড়ো মানুষটি কিন্তু অনেক মহৎ মানুষ। অনেক বড় নেতা। অহিংস আন্দোলনের জনক। ওকে শ্রদ্ধা কর।
বাবার কথা সব বুঝে উঠিনি সেদিন। বুঝেছিলাম বড় হয়ে।’’
বাঙালি জাতির স্বাধীনতার জন্য একমাত্র শেখ মুজিবুর রহমানই পেরেছিলেন সঠিক নির্দেশনা রেখে যেতে। এদিক দিয়ে বিচার করলে নিঃসন্দেহে স্বীকার করতে হয়, ভারত উপমহাদেশে, স্বাধীনতার সংগ্রামে বাস্তব নেতৃত্বের, শ্রেষ্ঠ দাবিদার একমাত্র শেখ মুজিবুর রহমান। পূর্ববর্তী নেতাদের ত্রুটিপূর্ণ স্বাধীনতা সংগ্রামের দুর্বলতা বা ভুলের মাশুল না দিয়ে দ্বিমাত্রিক সংগ্রামের নীতি অনুসরণ করে মাত্র তিন দশক পরই ভারত উপমহাদেশের ইতিহাস প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনের অধ্যায় তিনি সৃষ্টি করে গেছেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা উল্লেখ্য করতে গিয়ে লেখক লিখেছেন—‘বাঙালি জাতির স্বাধীনতার জন্য একমাত্র শেখ মুজিবুর রহমানই পেরেছিলেন সঠিক নির্দেশনা রেখে যেতে। এদিক দিয়ে বিচার করলে নিঃসন্দেহে স্বীকার করতে হয়, ভারত উপমহাদেশে, স্বাধীনতার সংগ্রামে বাস্তব নেতৃত্বের, শ্রেষ্ঠ দাবিদার একমাত্র শেখ মুজিবুর রহমান। পূর্ববর্তী নেতাদের ত্রুটিপূর্ণ স্বাধীনতা সংগ্রামের দুর্বলতা বা ভুলের মাশুল না দিয়ে দ্বিমাত্রিক সংগ্রামের নীতি অনুসরণ করে মাত্র তিন দশক পরই ভারত উপমহাদেশের ইতিহাস প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনের অধ্যায় তিনি সৃষ্টি করে গেছেন।’
পাকিস্তান হওয়ার পর লেখককে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। ধর্মের গোড়ামীর কাছে কখনো আপোষ করেননি তিনি। প্রতিবাদ করছেন তীব্রভাবে। সুফি অধ্যাত্মবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সুফিবাদের উপর পড়াশোনা করেন। তিনি দেখেন বাংলাদেশে যে ইসলাম, তা প্রধানত ছিল সুফি অধ্যাত্মবাদের প্রভাবিত। তিনি লিখেছেন, ‘ এখন ভাবতে দ্বিধাবোধ করি না, হাজার বছর ধরে বাংলার মানুষের ধর্ম প্রধানত ছিল প্রেম আর ভক্তি সমন্বিত স্রষ্টার অনুসন্ধানের মগ্নতা। এ দেশের সহজিয়া, বাউল–বৈষ্ণব আর সুফি–আউলিয়া–দরবেশ, পীর–মুর্শিদের ভক্তিবাদ..মরশি গানের আর্তি হয় শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রবহমান থেকেছে..হাটে, মাঠে, ঘাটে, প্রান্তরে..সহজ মানুষের সহজ বিশ্বাস। লালন শাহ, হাছন রাজা অথবা শাহলাল ফকির সবাই সেই প্রবহমান ধারার বাহক। কলমের আঁচড়ে কতগুলো প্রাণহীন আইন–কানুনের বন্দিজালে আবদ্ধ ধর্মাচরণের মোটা দাগে তৈরি ইসলামী রাষ্ট্র নামের রাজনীতি বিশ্বাসীদের পক্ষে বাংলাদেশের অন্তঃসলিলা প্রবহমান ধর্মবোধটিকে উপলব্ধি করা খুব সহজ কাজ ছিল না। ছিল না বলেই এ দেশে বায়ান্ন থেকে একাত্তর পর্যন্ত অস্ত্রের জোরে ধর্ম শেখাতে গিয়ে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বি–জাতিতত্ত্বই ধর্ম হারিয়েছিল।’
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক রিজিয়া রহমান তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ নদী নিরবধি একটি চমৎকার আত্মজীবনী। পড়তে পড়তে নিজেকে আবিস্কার করা যায়। ছেলেবেলার কাছে ফিরে যাওয়া যায়, স্বপ্নকে নতুন ভাবে সৃষ্টির করার অনুপ্রাণিত করে। এদেশের ইতিহাস–সংস্কৃতিকে আকঁড়ে ধরে নতুন দিগন্তে ছুটে চলার স্বপ্ন প্রবহমান করে।লেখক যেমনটি একবারে শেষে বলেছেন,‘ নিয়ত প্রবহমান বিশাল পদ্মার মতোই সুরের আর্তি তখন নিরবধি বইতে থাকল আমার স্বপ্নের পৃথিবীজুড়ে।’
Category: Book
Tags:
Share with others
Recent Posts
Recently published articles!
-
Mukto Library Desk
-
Super Admin
-
Nasir Khan
-
Super Admin