১৯৭১ ঘাতক-দালালদের বক্তৃতা ও বিবৃতি

দন্ত্যস রওশন চার লাইনের মহাকাব্য! হ্যাঁ, আমার কাছে অন্তত তাই! অল্প কথায় ‘অনেক কথা’ প্রকাশ করা সম্ভব হলে- হাজার লক্ষ শব্দ নিয়ে টানাটানির প্রয়োজন হয় না! তাই বলে লক্ষ-কোটি শব্দ নিয়ে কাব্য সাহিত্য রচনার প্রয়োজন এই চারলাইনই ‘মিটিয়ে দিল’- এমনটি বলার মত মুর্খতা আমার নেই।

hero

‘ছেলেটি বাদাম ছিলিত
মেয়েটি বাদাম গিলিত
বাদাম হইল শেষ
মেয়েটি নিরুদ্দেশ’!

-দন্ত্যস রওশন চার লাইনের মহাকাব্য! হ্যাঁ, আমার কাছে অন্তত তাই! অল্প কথায় ‘অনেক কথা’ প্রকাশ করা সম্ভব হলে- হাজার লক্ষ শব্দ নিয়ে টানাটানির প্রয়োজন হয় না! তাই বলে লক্ষ-কোটি শব্দ নিয়ে কাব্য সাহিত্য রচনার প্রয়োজন এই চারলাইনই ‘মিটিয়ে দিল’- এমনটি বলার মত মুর্খতা আমার নেই। ব্যাপারটি আসলে-যার যার, তার তার! যিনি যেভাবে প্রকাশ করবেন- সেটা তারই পথ। এই চার লাইন নিয়ে আমি একটা ফিল্ম বানাতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করতাম! কিন্তু সম্ভব নয় আমার পক্ষে! কিন্তু দন্ত্যস রওশন পেরেছেন চার লাইনে ‘মাত’করতে! ওঁর পুরো নাম সাইদুজ্জামান রওশন। ‘সাইদুজ্জামান’-এর অদ্যাক্ষর ‘স’কে পুঁজি করে নিজের নামে ভিন্নতা এনেছেন- ‘দন্ত্যস রওশন’ নামে। এ নামে চাকচিক্য আছে, আছে বাহার। সদা-রসিক এই যুবকটির সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল আশির দশকে-বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে।

খুব আস্তে, গুছিয়ে, নিচুস্বরে কথা বলেন রওশন। তার কথার ধরণ আর লেখার ঝাঁকুনি- আমাকে টেনেছিল খুব জোরে! সেই থেকে সু-সম্পর্কের শুরু, পরে বন্ধুত্ব। রওশন- তার এই ধরণের কবিতা দিয়ে একটা গ্রন্থ প্রকাশ করেন নিয়মিত (প্রতি বইমেলায়)। সেই গ্রন্থের নাম ‘অনুকাব্য’। গ্রন্থটি আকারে বেশ ছোট, অনেকটা পকেট ডায়রির মত। পাঞ্জাবি কিংবা প্যান্টের পকেটে খুব সহজেই ঢুকিয়ে ফেলা যায়। আবার চাইলে নিজের সংগ্রহের তাকে সাজিয়ে রাখা যায় সারি সারি! আমি অবশ্য সেটাই করেছি। অণুকাব্য দেখতে ছোট হলেও ভেতরে কিন্তু তেজ আছে, আগুন আছে, রস আছে ম্যালা! ওঁর অনেক ছড়া কবিতা আমার ঠোঁটস্ত! তার সাথে দেখা হলেই ওখান থেকে গোটা দুই ছড়া আওড়ে নিয়ে অন্য প্রসংগে যাওয়া আমার রীতিসিদ্ধ অভ্যেস! সাংবাদিক সাইদুজ্জামান রওশনকে যেমন চেনেন অনেকে; তেমনি আবার লক্ষ মানুষ যেচে ভালোবাসেন তাকে- তার কাব্য-গুণের কারণে।

আমি তার অনেক অনুরাগীদের একজন! রওশন সাংবাদিকতার চাইতেও কবিতা, গল্প উপন্যাস শিশুসাহিত্য দিয়ে অনেক বেশি পরিচিত। ‘অণুকাব্য’ লিখে অর্জন করেছেন খ্যাতি আর জনপ্রিয়তা। তার কিশোর উপন্যাসের জন্য অগ্রণী ব্যাংক শিশু একাডেমি শিশুসাহিত্য পুরষ্কার পেয়েছেন। পেয়েছেন আরও ক’টি সাহিত্য পুরষ্কার।

সেদিন রওশন আমার জন্য একটা ‘অ-অণুকাব্য’ নিয়ে এসেছিলেন আমার জন্মদিনে (১২ জুন, ২০২১)। গ্রন্থটির শিরোনাম ‘১৯৭১ ঘাতক-দালালদের বক্তৃতা বিবৃতি’। জানা গেল- রওশনের লেখা এ ধরণের গোটা পঞ্চাশেক বই ইতোমধ্যেই পাঠকের হাতে পৌঁছেছে। কম কথা নয় এটা! অভিনন্দন রওশন আপনাকে।

সেদিন রওশন আমার জন্য একটা ‘অ-অণুকাব্য’ নিয়ে এসেছিলেন আমার জন্মদিনে (১২ জুন, ২০২১)। গ্রন্থটির শিরোনাম ‘১৯৭১ ঘাতক-দালালদের বক্তৃতা বিবৃতি’। জানা গেল- রওশনের লেখা এ ধরণের গোটা পঞ্চাশেক বই ইতোমধ্যেই পাঠকের হাতে পৌঁছেছে। কম কথা নয় এটা! অভিনন্দন রওশন আপনাকে।

সেদিন অবশ্য আমার আরো একজন প্রিয় মানুষ-লেখক-সম্পাদক কামরুল ইসলাম উনাদের একটি সাহিত্য সংকলন (বঙ্গীয়) আমাকে উপহার দিয়েছেন; গায়ে জড়িয়ে দিয়েছেন উত্তরীয়। আমি অভিভূত, আপ্লুত! যদিও আমি সাহিত্যের মানুষ নই- তবুও ‘বঙ্গীয়’ নিয়ে কাল পরশু লেখার ইচ্ছে আছে। আজ শুধুমাত্র রওশনের কীর্তি নিয়ে কথা বলতে চাই। রওশনের এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৩ সালে একুশের মেলায়। এটার দ্বিতীয় মুদ্রণ হয়েছে চলতি ২০২১ সালে-এবারের বই মেলায়। বইটি আমার কাছে মূল্যবান। যেহেতু আমি প্রধানত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করি- সেহেতু বইটি আমার কাছে একটি প্রামাণ্য দলিল।

বইটির ভূমিকায় রওশন লিখেছেন- ‘বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। ..এই ঘাতক-দালাল, রাজাকার, আলবদর, আলশামসরা অসংখ্য বাঙালি নির্যাতনে ও হত্যায়, কখনো হয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী আবার কখনো-বা নিজেরাই পালন করেছে খুনির ভূমিকা। লাখ লাখ নারী নির্যাতনেও তারা পিছপা হয়নি। নতুন প্রজন্মের একাত্তরের ঘাতক-দালালদের স্বরূপ জানা জরুরি। তাই ঘাতক-দালালদের ভূমিকা সহজভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে ১৯৭১ ঘাতক-দালালদের বক্তৃতা ও বিবৃতি বইটিতে। …

বইটি পাঠ করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির প্রতি ঘৃণা এবং সেই শক্তিকে নির্মূল করার প্রয়াস পেলে তবেই বইটির সার্থকতা।’ রওশনের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করি। তার জয়ের ধারা আরো বেগবান হোক।

Category: Book

Tags:

Share with others